সেই কবে আকাশে মেঘ জমেছে, সেই আকাশ এখনও পরিষ্কার হয়নি। বুকের ভিতরটা জলহীন নদীর মত আজও হাহাকার করে। হঠাৎ যে এসেছিল বসন্তের নবদূতের মত, কিন্তু কেন সে চলে গেল কালবৈশাখী ঝড়ের মত। আজ অনেক দিন হল কিন্তু তবুও তাকে কি এইটুকু ভুলতে পেরেছি? না চাইতেও সেইদিন আইডি টা ব্লক করেছিল রতন। প্রায় দেড় বছর পর। কেমন জানি লাগছে। বুকের ভিতর হৃদয়ের স্পন্দন যেন ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। সেই প্রথম দিনের মত। যে দিন প্রথম কথা হয় ইমনের সাথে। আজ কেন জানি পুরানো অনুভুতিটা আবার জেগে উঠছে। সাথে ভয়ও করছে। এত দিন পর আবার দেখে নিজেকে সামলাতে পারবে তো? ভয়, শূণ্যতা মিলে এক বাজে অনুভুতি। এখনই মনে হয় বক্ষপিঞ্জর থেকে হৃদয় টা বের হয়ে যাবে।
আইডি টার নামের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায়ে আছে। কি করবে? যাবে আইডি তে? নাকি আবার ব্লকের ঘরে বসায়ে দিবে? ধুর!!! তিন দিনের আগে তো আর ব্লক করা যাবে না। কি করবে বুঝতে পারছে অপ্রিয় হলেও মনটা যে বারবার যেতে চায়। অবশেষে সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভেঙে খুলে ফেললো আইডি টা। ঢুকতেই এক হাস্যজ্জল চেহারা। দেখেই রতনের বুকে অনেক জোরে একটা ধাক্কা লাগলো। অনেক পছন্দের একটা মুখ। যে মুখটা দেখে এক সময় সে ঘুমাতে যেত। খুব মায়াবী লাগতো রতনের। এখন আরও মায়াবী লাগছে। হয়তো অনেক দিন পর দেখার জন্য এমন হচ্ছে। কেও বুঝবেও না এই মায়ার পিছনে একটা নিকৃষ্ট অবয়ব লুকানো। তাই তো এত সহজেই ধরা দেয় রতন।
কলেজে পড়ার সময় ইমনের সাথে পরিচয়। কথা খুব কম হত। ভার্সিটি ওঠার পর যোগাযোগটা বাড়ে। ইমনই করে। আর প্রথম কথাতেই নিজের ভালবাসার কথা বলে দেয় ইমন। স্বপ্নের মত লাগে রতনের। মনে মনে সেও ভালবাসতো যে। কিন্তু বলার সাহস করে ওঠেনি। কেমন জানি ভয় লাগছিলো রতনের। আবার খুশিও। নিজের পছন্দের মানুষ ভালবাসার কথা বললে এর থেকে খুশির কথা কি বা হয়? আর দশটা ছেলের মত রতনও বুনতো স্বপ্ন ইমনকে নিয়ে। ভালবাসার সুতো দিয়ে আস্তে আস্তে বুনে ফেলে স্বপ্নের জাল। সেই জালে আটকা ছিল রতনের মন যেখানে শুধুই ইমন। কিন্তু জাল বুনার কাটা ছিল ইমনের হাতে। স্বপ্ন বোনা শেষের দিকে ইমন সেই কাটা ধরে টান দেয় আর পুরো জালটা খুলে যায়। আটকে থাকা মনটাও পরে ভেঙে যায়। রক্ত ক্ষরণ হয় অনেক। কিন্তু ইমনের চোখে সেটা পরে নি। ইমনের চোখের রঙিন চশমা ভেদ করে ভাঙা টুকরাগুলো দেখতে পেল না।
দেড় বছর ধরে টুকরোগুলো জোড়া লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আজকাল চেষ্টায়েও ভেজাল আছে। জোড়া লাগেই না। রতনও হাল ছেড়ে দিয়েছে। থাক না। এমন ভাঙা টুকরোগুলো নিয়ে যতদিন থাকা যায়। খুব হাসছে ছবিতে ইমন। নিষ্পাপ চাহনি। হাসিতে অনেক পবিত্রতা। একটু নিচে যেতেই দেখলো হাস্যজ্জ্বল মুখটির পাশে আরেকটা মুখ। বুকের কম্পন আরও বেড়ে গেলো। শেষ হয়ে গেল। এত দিন মনের ভিতর কোথাও থেকে একটা আশার বাণি উঁকি দিত। আজ সেই আশা চোখের জল হয়ে টপ করে পরলো। বেশ মানিয়েছে দুইজনকে। রতির থেকে ঢের সুন্দর। মানুষ সুন্দরের পূজারী। এই জন্যেই হয়তো ইমন সুন্দরকেই বেছে নিয়েছে। ঠিকই করেছে। সবারই অধিকার থাকে ভালটা পাওয়ার। ইমনেরও আছে। আর নিচে গেল না। ব্লক বোতামে চাপ দিল। ৪৮ ঘন্টার আগে হবে না। অগত্যা নিজের আইডি বন্ধ করে দিলো। আজ আবার কান্না পাচ্ছে। সেই দিনের মত যে দিন ইমন ছেড়ে চলে যায়। আজ আবার কষ্টটা তাজা হয়ে গেল।
ক্রিং ক্রিং............
মোবাইলটা হাতে নিয়েই দেখে ইশানের নাম। ধরলো না। আবার বেজে উঠলো। এবারও ধরলো না। নাহ্। বারবার দিয়েই যাচ্ছে। খুব জ্বালাচ্ছে ছেলেটা। ইশানও ছাড়ার পাত্র না। ছেলেটা সব জানে। তবুও রতনের পিছনে পড়ে আছে। রতন এত অবজ্ঞা করে!!! তবুও তার থামাথামি নাই। বিরক্ত হয়ে গেছে রতন। কল দিয়েই যাচ্ছে।
- এই, সমস্যা কি আপনার? (রতন)
- কি সমস্যা মানে? কই ছিলা? কখন থেকে কল দিচ্ছি। (ইশান)
- সেটা আপনাকে বলার দরকার মনে করি না।
- ইশ্। তাহলে কাকে বলবা শুনি?
- রাখেন তো।
- উহু। রাখবো না। কথা আছে।
- আমার কথা নাই।
- না থাক। আমার তো আছে।
- অনেক সাহস আপনার।
- হবু বফয়ের সাথে কথা বলার জন্য আবার সাহস লাগে নাকি?
- এই দেখেন। ফালতু কথা বলবেন না। আমি আপনার বফ না।
- আমি কখন বললাম তুমি আমার বফ? হবু বফ।
- উফ্। কেন ফোন দিয়েছেন বলেন।
- একটু বাইরে যাব। চলনা আমার সাথে।
- পারব না।
- প্লিজ। আজ আমার জন্মদিন। মা বাবা এখানে নাই। একা একা কাটাবো বল? এই অসহায় শিশুর জন্য দয়া করো।
- শিশু!!! হা হা হা।
- হ্যা। মাত্র জন্ম নিলাম তো।
- জন্ম নিয়েই ফোন দিয়ে জ্বালাচ্ছেন?
- কি করবো বলো? এত সুন্দর ছেলের সাথে কথা না বলে থাকা যায়?
- কে সুন্দর? খুব তো চাপা করেন।
- চাপা না। সত্যি। যদিও তোমার চোখ ছোট, নাক বোচা। চাইনিজ দের মত। তবুও সুন্দর আমার কাছে। চাইনিজ বিউটি।
ইশানের কথা শুনে রতন আটকে গেলো। আসলেই কি সে সুন্দর? তাকেও কি কেউ ভালবাসতে পারে? ইশান কেন এইসব বলে?
- হ্যালো? (ইশান)
- হুম। বলেন।
- কই হারাও?
- কোথাও না।
- গুড। হারাতে দিলে তো। তুমি আমার আকাশের রং, আর আমি তোমার আকাশ, আকাশ যেমন রং ছাড়া বেমানান ঠিক আমিও তুমি ছাড়া অস্তিত্বহীন - তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। আসছি আমি।
- যাব না বললাম তো।
- প্লি...............জ...........
- আচ্ছা। ঠিক আছে।
- ইয়ে....... শোন লাল 🔴শার্ট পরবা।
- কেন?
- তোমাকে অনেক মানায় তাই।
- আচ্ছা দেখি। রাখি এখন। আপনি ২ ঘন্টা পর আসবেন।
- কেন?
- কাজ আছে আমার।
- ওকে।
- বাই।
- বাই।
ফোন রেখে রতন আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখছে। আসলেই কি সে সুন্দর? নিজেই হেসে ফেললো। খেয়াল করলো তার চোখের পানি শুকিয়েও গেছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটেছে। কষ্ট অনেক কমে গেছে। কিন্তু এত দিন এই মানুষটাকে সে পাত্তা দেয় নি। আজ সে মার্কেট যাবে। ইশানের জন্য তার পছন্দের সেই সবুজ শার্ট টা কিনবে আজ। ইমনকে দিবে বলে ঠিক করেছিল। আসলে যে যার যোগ্য না তাকে সেটা মানায় না। বিধাতাও হয়তো তাই চায়। জীবনকে একটা সুযোগ দিতে হবে। নিজের ইচ্ছাগুলো এখন পূরন করবে রতন। ইশানের কথা মত লাল জামাটা বের করে পরলো। আয়নার সামনে বসে নিজেকে পরিপাটি করছে। অনেক দিন পর। নিজের জন্য না। ইশানের জন্য। আজ অনেক দিন পর রতনের মুখে সেই হাসি যা দেড় বছর আগে কবর দিয়েছিল।
চোখে নতুন সকালের আলো চিকচিক করছে। ইশানের জন্য। ইশান তোমার কাছে শুধু একটা মিনতি - সুন্দরের পূজারী হও সমস্যা নেই, কিন্তু সেই সৌন্দর্য দেহের না হয়ে মনের সৌন্দর্যের পূজারী হও 😍 😘
মূল পাতা
আমাদের সম্বন্ধে
সম্পাদকের বক্তব্য
তথ্য ভান্ডার
সৃজনশীলতা
সংবাদ
স্মৃতি চারণ
প্রেসবিজ্ঞপ্তি
জরুরী আবেদন
নিবন্ধ
দন্ডবিধি